মির্জাগঞ্জে হতাশায় নিম্নআয়ের মানুষ

প্রকাশিত: ৭:১৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৪, ২০২০

মেহেদি হাসান মুবিন, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : প্রাণঘাতি (কোভিড-১৯) করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে বিপাকে পড়েছেন দৈনিন্দন (নিম্ম) আয়ের বিপুল সংখ্যক লোক। এদের মধ্যে দাস সম্প্রদায়, শীল সম্প্রদায়, সিমেন্টের দোকানের শ্রমিক, রিকশা চালক এবং ফুটপাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখন সম্পূর্ণ বেকার সময় পার করছেন।

তাদের কর্মস্থল বন্ধ থাকায় উপার্জন থমকে গেছে। এরই মধ্যে সরকারি কিংবা বেসরকারি পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী যা পাচ্ছেন তাতে তাদের দৈনিন্দন চাহিদা মিঠছে না বলে অনেকেই আপেক্ষ করেছেন। তবে যারা খাদ্যসহযোগিতা পাচ্ছেন, তাতে মিঠছেনা তাদের সংসারের চাহিদা। এতে উপায় না পেয়ে পরিবারের খাবার জোগাতে অনেকেই রাস্তায় বের হয়ে পড়ছেন। তবে মিলাতে পাচ্ছে না কোনো কাজ।

তাদের চোখে মুখে এখন চিন্তার ছাপ। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আয়ের পদ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মঙ্গলবার( ১৪ এপ্রিল) উপজেলার বিভিন্ন বাজারে দিনভর ঘুরে খেটে খাওয়া দিনমজুর লোকজনের সঙ্গে কথা হলে এমন চিত্র ফুটে উঠে। খেটে খাওয়া লোকজনের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন, তারা পরিবারের খাবারের জোগান দিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই রাস্তায় বের হচ্ছেন। তবে রিকশা চালক পাচ্ছে না যাত্রী। দিনমজুর পাচ্ছে কোনো কাজ। কোনো এলাকায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণের খবর পেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।

আড়াইহাজার পৌরসভা বাজারে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালক খলিল বলেন, তার পরিবারে ৬ জন সদস্য রয়েছেন। দৈনিক সংসারে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হচ্ছে। এখন তার দৈনিক রোজগার হচ্ছে সারাদিনে ১০০ থেকে ২০০টাকা। এর মধ্যে রিকশার মালিককে জমা দিতে হচ্ছে ১০০টাকা। এই অবস্থায় তার সংসার চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। অপরদিকে বিপাকে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের প্রায় ২ শতাধিক শীল সম্প্রদায় সেলুন ব্যবসায়ী। এসব সেলুনে দৈনিক মজুরিতে কাজ করছেন প্রায় ৬ শতাধিক শ্রমিক। তারা দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করতেন। এদিয়ে হেঁসেখেলেই চলতো তাদের সংসার। র্দীঘদিন ধরে তাদের কর্মস্থল বন্ধ রয়েছে।

এতে তাদের আয়ের একমাত্র পথও বন্ধ হয়ে গেছে। সংসারের একমাত্র ব্যক্তির উপার্জন বন্ধ হয়ে পড়ায় অনেক পরিবারেই মানবেতর এখন জীবনযাপন করছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তাদের মধ্যে অনেকেই পায়নি সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো খাদ্য সহযোগিতা। তবে যারা পাচ্ছেন, তাতে মিঠছে না তাদের পরিবারের চাহিদা।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা সুবিদখালী বাজারের সেলুন ব্যবসায়ী বাবুল শীল বলেন, সুবিদখালী বাজারে ২০টি সেলুন দোকান আছে। এখানে প্রতিটি দোকানেই গড়ে ২জন শ্রমিক কাজ করে আসছিলেন। তারা প্রত্যেকেই দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০টাকা রোজগার করতেন। এখন তাদের উপার্জন বন্ধ। তিনি আরো বলেন, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রায় দুই শতাধিক সেলুন দোকান আছে। বর্তমানে দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। এরই সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে মালিক-কর্মচারির আয়ের একমাত্র পথ।

একই বাজারের শংকর শীল বলেন, অন্যপেশার অবিজ্ঞতা না থাকায় আমরা পড়েছে মহাবিপদে। দিনভর কর্মব্যস্ত সেলুনগুলো বর্তমানে তালা ঝুলছে। প্রতিটি সেলুনেই গড়ে ৪ থেকে ৫জন শ্রমিক কর্মরত। এখন তাদেরও আয়রোজগার বন্ধ। অর্থ অভাবে সবাই এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

উপজেলা উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন,এ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৫০০ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা হয়েছে। তাদের এ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম প্রক্রীয়াধীন আছে।