সেই অন্ধ বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও ছানাউল ইসলাম

প্রকাশিত: ৪:৫৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০২০

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি: দেশে চলছে মহামারি করোনার ক্রান্তিকাল। ঠিক এ সময়ে অঘোষিত লকডাউনে স্থবির সকল এলাকা। মানুষের কাজ নেই। নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর বাজার সংলগ্ন টিনের এক ঝুপড়ি ঘরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে ৭০বছর বয়সী বৃদ্ধা রুপভানের এমন অসহায়ত্বের সংবাদ পেয়ে মর্মাহত হন নওগাঁর আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ছানাউল ইনলাম।

বুধবার দুপুরে নিজে অসহায় অন্ধ বৃদ্ধা রুপভানের বাড়িতে নিত্যপণ্য নিয়ে হাজির হন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছানাউল ইসলাম বলেন, সবাইকে ঘরে থাকছে বলছি। কারণ অজ্ঞাত-অচিহ্নিত ও অদৃশ্য শক্তি করোনার বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করছি। আমরা নিজেরা যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সতর্ক না হই তাহলে আমাদের সর্বনাশ আমরাই ডেকে আনবো। কারণ এই করোনা ভাইরাস যদি কাউকে স্পর্শ করে তাহলে শুধু ওই ব্যক্তিই মারা যাবে না পুরো ওই গ্রাম এমনকি ওই অঞ্চলটি মৃত্যুপুরিতে পরিণত হবে। তাই আসুন আমরা ঘরের বাহিরে বের না হয়ে একটু কষ্ট হলেও তা মেনে নিয়ে নিজ নিজ জায়গা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যুদ্ধ ঘোষনা করি।

এই সংকট চলাকালীন সময়ে আপনাদের অভাবের কথা ঘরে ঘরে গিয়ে শোনা হবে এবং প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রীসহ অন্যান্য উপকরন পৌছে দিয়ে আসা হবে। সরকারের পাশাপাশি আমিসহ আমার লোকেরা উপজেলার প্রতিটি কর্মহীন মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে আপনাদের খোঁজ খবর নিয়ে সহযোগিতা দিয়ে আসবো। শুধুমাত্র আপনারা ঘরে বসে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন যেন আমাদের দেশে এই ভাইরাস মহামারি আকার ধারন না করে।

তিনি আরো বলেন, আত্রাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃদ্ধা রুপভানসহ অসহায় গরীব মানুষের প্রতি আমার সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।

অন্ধ বৃদ্ধা রুপভান বলেন, বুধবার দুপুরে হঠাৎ করেই ইউএনও স্যার আমায় চাল, ডাল দিয়ে গেল। তাকে কাছে পেয়ে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানালাম। ঘরে এখন প্রায় ২০-২২ কেজি চাল হয়েছে আমার। তিনি আমার অসহায়ত্ব দেখে আমায় একটি বাড়িও করে দিতে চাইলেন।

উল্লেখ্য, ৭০ বছরের বৃদ্ধা রুপভান। থাকেন নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর বাজার সংলগ্ন টিনের ছাউনি ঘেরা ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘরে। সেই ঝুপড়ি ঘরে গত কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন তিনি। স্বামী মছির প্রামানিক মারা গেছেন প্রায় ৩০বছর আগে। বয়সের ভারে অন্ধত্ব বরণ করায় এখন আর কাজ করতে পারেন না। থাকেন স্বামী পরিতক্তা এক মেয়ের কাছে। মেয়েটি বিভিন্ন জনের বাড়িতে কাজ করে তা দিয়েই চলে তাদের জীবন যাত্রা।

শুধু রুপভানই নন, ওই এলাকার কয়েকটি পরিবারের একই অবস্থায় দিন কাটছে। করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তাদের জীবন ধারণ। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।

সারা দেশের মতো নওগাঁর আত্রাইয়েও চলছে অঘোষিত লকডাউন। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দিনমজুরসহ নিম্নআয়ের মানুষ।