রাণীনগরে করোনা সন্দেহে চিকিৎসার অভাবে মারা গেলেন যুবক

প্রকাশিত: ৮:৩১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২০

নাজমুল হক নাহিদ, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে ঢাকা থেকে আসা আল আমিন (২২) নামে এক যুবক তীব্র সর্দি, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। পরিবারের দাবী করোনা ভাইরাস সন্দেহে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন আল আমিন। শনিবার (২৮ মার্চ) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে ৮টার দিকে মারা যান তিনি।

রাতেই তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। রোববার সকাল থেকে দাফন কাফন করা হয় বলে নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। তবে এর আগে আল আমিনকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে গ্রামবাসী ও ইউপি মেম্বার তাকে গ্রামে প্রবেশ করতে দেয়নি।

স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করতেন। শনিবার সকালে গায়ে প্রচন্ড সর্দি, জ্বর ও কাশি নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা থেকে নওগাঁতে পৌছে আল আমিন। এরপর সকালেই বাড়ীতে আসার সময় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও গ্রামের কিছু লোকজন তাকে গ্রামে প্রবেশ করতে দেয়নি।

এলাকার ভেটি স্ট্যান্ড থেকে চিকিৎসার জন্য তাকে পাশ্ববর্তী বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা না করে ফিরিয়ে দেন। এরপর আবারও তাকে নিয়ে এসে ভেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের বারান্দায় রাখা হয়। পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুনকে অবগত করা হলে রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসকরা তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠায়। অবশেষে তিন হাসপাতাল ঘুরে রামেকে গিয়ে মারা যায়।

আল আমিনের বাবা মকলেছুর রহমান বলেন, ছেলেকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তাররা চিকিৎসা না দিয়েই রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার জন্য হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দেন। এরপর বিকেলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কিছু ওষধ ও ইনজেকশন লিখে দেন চিকিৎসকরা। সেগুলো দিয়েও ছেলের শরীরের জ্বর কোন ভাবেই কমছিলো না।

এরপর থেকে কোন চিকিৎসক আমার ছেলের আশেপাশে আর আসেনি। করোনা সন্দেহে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে অতিরিক্ত জ্বরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া (স্ট্রোক) বন্ধ হয়ে অবশেষে ছেলে রাত ৮টার দিকে মারা গেছে বলে দাবী করেন তিনি। তবে করোনা পরীক্ষার নীরিক্ষার জন্য কোন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে কিনা তা জানা নেই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু বলেন, আল আমিন জ্বর-সর্দির খবর পাওয়ার পর তার পরিবারকে বলেছিলাম চিকিৎসকের প্রতিবেদন নিয়ে গ্রামে আসতে। প্রতিবেদনে কোন সমস্যা না থাকলে গ্রামে আসবে, আর সমস্যা থাকলে আসার দরকার নেই। গ্রামবাসীর কথা ভেবেই এমন সীদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন বলেন, আল আমিনের শরীরে ১শ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে জ্বর ছিলো। হাসপাতালে তাকে অচেতন অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন বলেন, আল আমিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি। তিনি মেনিনজাইটিস রোগে মারা গেছে বলে জানা গেছে। করোনা ভাইরাসে মারা যায়নি বলে ডাক্তার ছাড়পত্র তা নিশ্চিত দিয়েছে। যেহেতু মেনিনজাইটিস রোগে মারা গেছে এতে লাশের দাফন কাফনে কোন সমস্যা নাই বলে মনে করেন তিনি।