করোনায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ

প্রকাশিত: ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৭, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। আমাদের দেশে সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের জনসমাগম নিষেধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
জরুরী কোন কাজ ছাড়া রাস্তাঘাটে মানুষকে না বেরোনোর জন্য বিশেষ ভাবে সর্তক করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে প্রচার করা হচ্ছে রাস্তায় বের না হওয়ার জন্য।

গত তিন দিন থেকে নওগাঁর রাস্তাঘাটে যানবাহন, অটোরিকশা, রিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেল চলাচল অনেকটা কমে গেছে। শহরে রাস্তাঘাটে অটোরিকশা ও ভ্যান তেমন চোখে পড়ছেনা। আতঙ্কে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষরা পড়েছেন বিপাকে। আয়-রোজগারের কোন পথ না থাকায় পেটের দায়ে তারা ঘরে থাকতেও পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে ভ্যান নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। ভাড়ার আসায় নওগাঁ সদর হাসপাতালের গেটে সকাল থেকে অপেক্ষা করছিলেন কয়েকজন রিকশা চালক।

এদের মধ্যে একজন নওগাঁ সদর উপজেলার কানমটকা গ্রামের রিকশা চালক বয়োজ্যেষ্ঠ আজিজার রহমান।

তিনি বলেন, বাড়িতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। প্রতিদিন খাওয়া খরচ প্রায় ২শ টাকা। বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে রিকশা কিনেছি ও সংসারে কাজে টাকা ব্যয় করেছি। সপ্তাহে ১ হাজার ৮০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। প্রতিদিন প্রায় ৫/৬শ টাকা ভাড়া পেতাম। গত দুইদিন থেকে রাস্তায় বের না হওয়ার জন্য পুলিশ মাইকিং করছে। এ জন্য ভ্যান নিয়ে বের হতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, অবস্থা খুব খারাপ। বাড়িতে কিস্তির টাকা নিতে গিয়েছিল। জানিয়ে দিয়েছি কয়েকদিন পর ছাড়া কোন টাকা দিতে পারবো না। করোনার কারণে বাইরে মানুষ তেমন বের হচ্ছেনা। কিন্তু ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। তাই বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে বেরিয়েছি। যা একটু জমিয়েছিলাম ঘরে বসে থেকে শেষ হওয়ার উপক্রম। এছাড়া ভয়ে বাইরে বেরুতে পারিনি। পুলিশ পিটালে-পিটুনি খাওয়া যাবে। কিন্তু রিকশা ভেঙে দিলে তো সহজে কিনতে পারবো না। এই ভয়ে রিকশা বের করিনি।

মহাদেবপুর উপজেলার আন্ধারকোটা গ্রামে রিকশাচালক রকিব উদ্দিন বলেন, এনজিও থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দুই মাস আগে ব্যাটারি চালিত রিকশা কিনেছি। প্রতি মাসে সাড়ে ৯ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। গত তিন দিন রিকশা বের করতে পারিনি। এলাকার রোগী খুব করে জোরাজুরি করায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ভয়ে ভয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। ভাইরাসের কারণে রাস্তাঘাটে গাড়িঘোড়া কম চলছে। মানুষের আনাগোনাও কম। রিকশা বের করতে পারছিলাম না। রিকশা পড়ে থাকলে আবার ব্যাটারির সমস্যা হবে। তাই একটু বের করেছি।

করোনা আতঙ্কে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। তাই আতঙ্কিত না হয়ে আগামী দুই সপ্তাহ ঘরে সময় কাটানোর জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার সচেতন করা হচ্ছে।