ভালুকায় সরকারী হাসপাতালের গাফিলতিতে রাস্তায় সন্তান প্রসব

প্রকাশিত: ২:৪২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০২০

তমাল কান্তি সরকার,ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ভালুকা সরকারী হাসপাতালের গাফিলতিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমম্পেক্সে ভর্তি হওয়া রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করার ১৫ মিনিটের মাথায় রাস্তায় সন্তান প্রসব করেন রাজিয়া খাতুন (২২) নামে এক প্রসূতি। ঘটনাটি ঘটে বুধবার (১৮মার্চ) রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহা-সড়কের ভালুকা বাসস্ট্যান্ডের ফুটওভার ব্রিজের নিচে। বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস ছামাদ ভালুকা শেফার্ড মিলে ফল্ডিং পদে চাকুরি করেন একই মিলে তার স্ত্রী রাজিয়া খাতুন ও চাকরি করেন। তিনি পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের ওয়াবদা এলাকার মঞ্জিলা খাতুনের বাসায় স্বপরিবারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। আব্দুস ছামাদের স্ত্রী রাজিয়া খাতুন (২২) এর প্রসব ব্যথা ওঠলে তাঁকে রাত সাড়ে আটটার দিকে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমম্পেক্সে নিয়ে আসা হয়। রাজিয়াকে দেখে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. অমিত কুমার রায় রোগিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করার জন্য খোদেজা হালিম হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান।

এ সময় কর্ত্যবরত নার্স শামীমা খাতুন ওই ক্লিনিকে ফোন করে বলেন আল্ট্রার জন্য রোগী পাঠাচ্ছি। ওই নার্স রাজিয়ার সাথে একজন মহিলা দালালও পাঠিয়ে দেন। ক্লিনিক থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে রাজিয়াকে নিয়ে পুনঃরায় হাসপাতালে আসলে নার্স শামীমা আল্ট্রা দেখে রোগীনির স্বামীকে বলে দেন রাজিয়াকে ময়মনসিংহ নিয়ে যাওয়ার জন্য। আব্দুস ছামাদ কোনো উপায় না দেখে রিক্সা যোগে রাজিয়াকে নিয়ে ভালুকা বাসস্ট্যান্ডে আসার পর তার স্ত্রী ও শ^াশুড়ি মোমেনা আক্তারকে দাড় করিয়ে আব্দুস ছামাদ গাড়ির জন্য স্ট্যান্ডে গেলে রাজিয়ার প্রচন্ড প্রসব ব্যথা ওঠে। এ সময় ক্রাউন ওয়্যারস (প্রাঃ) লিমিটিডের নারী শ্রমিকরা এ অবস্থা দেখে ১০/১২ জন শ্রমিক চারপাশ থেকে ঘিরে দাঁড়ালে মিল শ্রমিক সুমার সহযোগিতায় রাজিয়া দ্বিতীয় বারের মতো ছেলে সন্তান প্রসব করেন। রাজিয়ার রক্তক্ষণ শুরু হলে তাঁকে উদ্ধার করে ফায়ার সাভিসের কর্মী সহ স্থানীরা আবারো ভালুকা সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রক্ত সংগ্রহ করে ভরার পর কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে মা ও ছেলে ভালই আছেন এবং শঙ্কামূক্ত রয়েছে।

রাস্তায় বাচ্চা প্রসব হওয়ার খবর পেয়ে ভালুকা মডেল থানার পুলিশ ও ভালুকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। খোদেজা হালিম হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আল্ট্রাসনোগ্রামের রিপোর্টে উলে¬খ করা হয়েছে রাজিয়ার বর্তমানে ৩৪ সপ্তাহ ৫দিন চলছে। বাচ্চা হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ দিয়েছে ২৪.০৪.২০২০ ইং এর এক সপ্তাহে আগে অথবা পড়ে। আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন ডা. মোঃ এম রহমান।

আব্দুস ছামাদ জানান, আমার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা ওঠার পর হাসপাতালে নিয়ে আসলে খোদেজা হালিম হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়ে আবার হাসপাতালে গেলে রিপোর্ট দেখে আমার স্ত্রীকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। বাসস্ট্যান্ডের ফুট ওভার ব্রীজের নিচে আমার স্ত্রী ও শ^াশুড়িকে দাড় করিয়ে গাড়ি খোঁজতে গেলে রাস্তার মাঝেই ছেলে সন্তান প্রসব করেন।

নার্স শামীমা আক্তার জানান, আমি আল্ট্রার রিপোর্ট দেখে রোগিকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছি। এটা আমার ভুল হয়েছে।

জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা.অমিত কুমার রায় জানান, আমি রোগীকে ময়মনসিংহ রেফার্ড করিনি। প্রশ্ন করা হয় তাহলে রোগির স্বামী কি অঙ্গীকার নামা দিয়ে এ হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেছেন? উত্তরে তিনি জানান সেটা আমি জানি না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পপ কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিন জানান, আমি খবর নিয়ে দেখলাম হ্যা হাসপাতালের বাইয়ে একটি বাচ্চা হয়েছে। এখন মা ও নবজাতক ভালই আছেন।